সঞ্চয় অথবা বিনিয়োগঃ কোনটি উত্তম?

মাসের সব খরচ সেরে কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়ের জন্য প্রতিটি কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্কের একপ্রকার লড়াই করতে হয়। জমানো এই অর্থ দিয়ে আপনি আপনার অধিক খরচের দিনগুলি বা আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ দিনগুলি সুরক্ষিত করতে পারেন। তাই প্রতি মাসের খরচগুলি শোধ করার পর যদি আপনার কিছু অর্থ বেঁচে যায়, তবে তা বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজে লাগানো উচিৎ।

এই অর্থ নিরাপদে জমিয়ে রাখার প্রথম ও সাধারণ পদক্ষেপটি হলো- একটি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খোলা। সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টগুলো বেশ সহজ-স্বাভাবিক সরল প্রকৃতির, এতে জমাকৃত অর্থের উপর ঝুঁকি কম আর লাভও মাঝারি আকারের। অন্য উপায়টি হলো এই কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করা। যদিও কিছু কিছু বিনিয়োগে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি থাকে, তবে এগুলো থেকে প্রাপ্ত রিটার্নের পরিমাণও বেশি। সাধারণত, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগই পরিমানে বেশি  রিটার্ন সরবরাহ করে। এর মধ্যে কোন উপায়টি আপনার জন্য ভালো তা নির্ধারণ করা মূলত চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করেঃ ঝুঁকি সহনশীলতা, অভীষ্ট লক্ষ্য, শুরুতে কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন এবং আপনার বর্তমান বয়স।

আপনি যদি এই দুই উপায়ের জন্যই অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন, তবে তা আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে এবং সম্পদ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। মূলত, আপনার কাছে যত বেশি অর্থ আছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর উপায়ও তত বেশি। এখন প্রশ্ন হলো, বেশিরভাগ মানুষের মতো আপনার যদি শুরু করার জন্য সীমাবদ্ধ তহবিল থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে সেরা উপায়টি বেছে নিবেন? নিম্নে বর্ণিত সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে আপনার অতিরিক্ত অর্থ আপনি সঞ্চয় করবেন নাকি বিনিয়োগ করবেন তার সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজটি বেশ জটিল।

সঞ্চয়

সাধারণত, সঞ্চয় পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পদ তৈরিতে ঝুঁকি অনেক কম । এটি তুলনামূলক নিরাপদ হওয়ার কারণ হলো, একমাত্র অর্থ উত্তোলনেই এই তহবিল হ্রাস পায়। এতে লাভের হার অনেক কম হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে অর্জিত অর্থের পরিমাণও কম হয়। আপনি যদি ক্যারিয়ারের শুরুতে সঞ্চয় শুরু করেন, তবে এটি আপনার বাড়ি ক্রয় করা বা সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার মতো  স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য উপায় হতে পারে।

বাংলাদেশে সঞ্চয়-উপযোগী মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে সাধারণ সঞ্চয় হিসাব; যেখানে অ্যাকাউন্টধারীদের নিয়মিত অর্থ জমা করতে হয়। আরও আছে অর্থবাজার সঞ্চয়ী হিসাব -এতে সুদের হার বেশি হয়, তবে এর জন্য অ্যাকাউন্টধারীদের এই অ্যাকাউন্টগুলোতে বেশি পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়। এছাড়াও, সরকার প্রদত্ত সঞ্চয়পত্র রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে জাতীয় সঞ্চয়পত্রগুলো হল- ৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র।

বিনিয়োগ

পরবর্তী যে বিকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন, সেটি হল- বিনিয়োগ কী এবং এটি কীভাবে বাংলাদেশীদেরকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টধারীদের চেয়ে বেশি আয় করতে পারে এবং দ্রুত তাদের মূলধন বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও, চক্রবৃদ্ধি মুনাফার ক্ষেত্রে, আপনি মূলধন থেকে আয় করার পাশাপাশি আয়কৃত মুনাফার অবদান থেকেও আয় করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি হয়তো সর্বোপরি খুব অল্প অর্থ বিনিয়োগ করেও ইতিবাচক আয় পেতে সক্ষম হবেন।

যেকোন বিনিয়োগের খারাপ দিকটি হল আপনার প্রয়োজনে সেই অর্থ ব্যবহার করার পূর্বেই অর্থ হারানো বা  বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে, আপনার আর্থিক লক্ষ্য যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং বিনিয়োগ থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য আপনি যদি দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে পারেন, তবে আপনার বিনিয়োগটি মূল্যবান হতে পারে। এটি যেমন সময়ের সাথে সাথে আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সম্পদ তৈরি করার সুযোগ করে দেয়, তেমনি অবসর জীবনে আপনার এবং আপনার স্ত্রী/স্বামীর জন্য গ্যারান্টিযুক্ত আয়ের সুযোগ প্রদান করে থাকে।

অন্যদিকে, একটি সঞ্চয়ী বীমা পরিকল্পনা আপনার দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা পূরণের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্যেও সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। মেটলাইফের [https://www.metlife.com.bd/solutions/savings-investments/] -এর মতো বিনিয়োগ ও সঞ্চয় পরিকল্পনাগুলো দুই উপায়েরই সেরা সমাধান প্রদান করে থাকে। কিছু পরিকল্পনায় আপনি শুধুমাত্র এককালীন  অর্থ বিনিয়োগ  করে বার্ষিক ইন্টারেস্ট পেতে পারেন যা কিনা আপনার পলিসির মেয়াদপূর্তিতে প্রদান করা হবে। অন্যান্য পরিকল্পনাগুলো গ্রাহককে তার প্রদানকৃত প্রিমিয়ামের উপর উচ্চমাত্রার রিটার্ন প্রদান করে যা তাদের অবসর জীবনকে আর্থিকভাবে নিরাপদ করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এই পরিকল্পনাগুলোতে গ্রাহক জীবনবিমার আওতায় থাকেন। যেমন, মেটলাইফের লাইফলাইন[https://www.metlife.com.bd/solutions/retirement/lifeline-updated এভাবে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে যদি আপনি জীবনের পথে কোন অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন, তবে আপনার পরিবার কোন ঝামেলাহীন ভাবেই তাদের জীবন অতিবাহিত করতে পারবে।

আপনার অতিরিক্ত অর্থ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বীমায় বিনিয়োগ ও সঞ্চয় পরিকল্পনা একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক মাধ্যম যা আপনার প্রদানকৃত প্রিমিয়ামগুলো জমানোর পাশাপাশি আপনার ভবিষ্যতের সকল অনিশ্চয়তাগুলোর জন্য সুরক্ষা প্রদান করবে। আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য কোন পরিকল্পনাটি উত্তম তা জানার জন্য একজন ফিন্যান্সিয়াল এডভাইজরের সাথে কথা বলতে পারেন।